বনসাই এর ইতিহাস বহু পুরানো। ধারণা করা হয় প্রায় ২০০০ বৎসর পূর্বে চীনে এর শুরু হয়। বাংলাদেশেও এখন উন্নত মানের বনসাই কালচার চালু রয়েছে। এখন এসব বিদেশেও রপ্তানি হয়৷ বনসাই বলতে বুঝায় বৃক্ষ জাতীয় গাছকে (ফলজ ও বনজ) তার আকৃতি ঠিক রেখে সেগুলোর নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যসহ বিভিন্ন প্রকার টবে ধারণ করা৷ বনসাই চাষের মাধ্যমে অল্প পরিসরে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করা যায়৷ এর মাধ্যমে আনন্দ খোঁজাই বনসাই কালচারের উদ্দেশ্য। বর্তমানে বিভিন্ন বনসাই সোসাইটি, ব্যক্তিগত সংগ্রহকারী এমনকি নার্সারিতেও কিনতে পাওয়া যায় এটি। তবে বনসাইয়ের দরদাম নির্ভর করে গাছের বয়স ও গঠনের ওপর। সর্বনিম্ন তিন হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকায় বনসাই ক্রয় করতে পারেন। তবে মোটামুটি ভালোমানের একটি বনসাইয়ের জন্য ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা বাজেট রাখতে পারেন। বিভিন্ন বনসাই প্রদর্শনী, কৃষিমেলা এমনকি বনসাই প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকেও আপনি বনসাই সংগ্রহ করতে পারেন।
শব্দের উৎপত্তি
বনসাই একটি জীবন্ত শিল্প। একটি শক্ত কান্ড বিশিষ্ট গাছ কে একটি ছোট পটে রেখে বছরের পরবছর একে বাঁচিয়ে রাখার শিল্পকেই বনসাই বলে। প্রাচীন চীনা শব্দ ‘পেনজাই’ থেকে জাপানী ‘বনসাই’ শব্দের উৎপত্তি। বনসাই করতে ব্যবহৃত ট্রের মত যে পাত্র ব্যবহার করা হয় তাকেই সাধারণভাবে ‘বন’ বলা হয়। পাশ্চাত্যে পাত্রে ক্ষর্বাকৃতির গাছ বলতে ‘বনসাই’ বোঝায়।
ইতিহাস
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় পাত্রে বা টবে গাছ বা বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা উৎপাদনের কথা জানা যায়। ৪০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের রাজনৈতিক নথিপত্র থেকে পাথর কেটে তৈরি করা পাত্রে গাছ চাষের হদিস পাওয়া যায়। প্রচুর মন্দিরে তৃতীয় ফারাও রামেসেস পাত্রে লাগানো জলপাই, খেজুর এবং অন্যান্য গাছের বাগান দান করেছিলেন। প্রাচীন ভারতে ঔষধ আর খাবারের জন্য টবে বা পাত্রে গাছ লাগানোর প্রচলন ছিল।
২৬৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৪২০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যবর্তী জিন সাম্রাজ্যের সময়ের লেখালেখিতে প্রথম ‘পেনজাই’ শব্দের উল্যেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময়ে চীন দেশের নানা জায়গায়, জাপানে, কোরিয়াতে, ভিয়েতনামে এবং থাইল্যাণ্ডে ভিন্ন আকারে এর চর্চা বিস্তার লাভ করে। চৈনিক ছং রাজবংশের সময় জাপানে পাত্রে উৎপাদিত গাছের জনপ্রিয়তা পায়। জাপানের সাংস্কৃতিক বিনির্মাণের এই সময়ে তারা বেশকিছু চীন দেশীয় বৈশিষ্ট্য নিজেদের মত করে আত্মস্থ করে নেয়। পাত্রের ক্ষুদ্র গাছকে এই সময় ‘গামলার গাছ’(হাচি-নো-কি) বলা হত। জনৈক জাপানী জেন পুরোহিত, কোকান শিরেন-এর লেখা ‘ক্ষুদ্রাকৃতি বৃক্ষরাজির বাগান নিয়ে লেখা গদ্য’ বইয়ে ‘বনছেকি’ বা বনসাই এর নান্দনিক বৈশিষ্ট্য ও বাগান পরিকল্পনার আলোচনা পাওয়া যায়।
প্রথম প্রথম জাপানীরা পাত্রে জন্মানো বামনকৃত গাছ ঘরবাড়ী আর গাছ সাজাতে ব্যবহার করত। টকুযাওয়ার সময়ে বিস্তৃর্ণ বাগান তৈরি বিশেষ গুরুত্ব পায়। ধনীদের অবসরে বিনোদনের মাধ্যম হয়ে ওঠে আজালিয়া এবং ম্যাপলের মত গাছ পালন করা। বামনকৃত গাছ পাত্রে পালন করাও জনপ্রিয় ছিল। মোটামুটি ১৮০০ সালের দিকে জাপানীরা তুলনামূলকভাবে কম গভীর পাত্রে ক্ষুদ্র গাছ পরিচর্যা করার সাথে সাথে চৈনিক ‘পেনজাই’ শব্দের উচ্চারণ পরিবর্তন করে ফেলে।
টকিয়োর রাজশিক প্রাসাদে থাকা অনেক পুরানো জীবিত একটি বনসাইকে জাপানের জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বনসাই এর উপযুক্ত গাছ
যে সকল গাছের বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হয়। গাছের কান্ড মোটা হয়। বছরে একবার পাতা ঝরে। গাছের বয়স হলে গাছের ছাল মোটা হয়। গাছের ঝুরি নামে এমন গাছ, শিকড় কেটে দিলে ঝুরি গাছের শিকড়ের কাজ করে। গাছ অনেকদিন সতেজ থাকে এবং গাছের বয়স অনুযায়ী বেঁচে থাকে। যেখানে বা যেদেশে বনসাই করা হবে সে স্থানের আবহাওয়া উপযোগী হতে হয়। বনসাই এর প্রাচীনত্ব ও স্বাভাবিকত্ব এই দুই বিশেষত্বের কথা বিশেষভাবে মনে রেখে দেশয গাছ নিরবাচন করতে হয়।বিশেষজ্ঞের মতে, বট, তেঁতুল, নিম, শিমুল, বতাবীলেবু, বেগেনভিলিয়া, অশ্বথ, অর্জুন, রেনট্রি প্রভৃতি গাছপালা বনসাই এর উপযুক্ত। তবে বটবৃক্ষ সবচেয়ে উপযোগী। এর সুবিধা হলো টবে এর ঝুরি নামে। টবের ছোট্ট গাছে ঝুরি নামলে চমৎকার লাগে এবং একই সাথে গাছটির প্রাচীনত্ব তথা বয়সের সাক্ষ্যও ফুটে ওঠে।
বাংলাদেশে বনসাই করা যেতে পারে এমন গাছগুলো হল:
- বট , বকুল, শিমুল, পাকুড়, তেতুল, শিবীষ, বাবলা, পলাশ, বিলিতি বেল, ছাতিম, হিজল, জাম, নিম, বেলি, গাব, শেফালী, পেয়ারা, হেওরা, ডালিম, তমাল, জাম্বুরা, কমলা, বহেরা, বরই, বর্ডার, কামিনী, বগুন, মেহেদী, কড়ই, অর্জুন, জারুল, জুনিপার, নরশিংধ, করমচা, লুকলুকি, কৃষ্ণচূড়া, কদবেল, দেবদারু, সাইকেশ, হরিতকি, কামরাঙা, আমলকি, , নীলজবা, লালজবা, সুমফুল, এশফেরা, অশ্বথ বট, নুডা বট, পাকুর বট, কাঠলি বট, রঙ্গন, ছোট রঙ্গন, বড় নিম সুন্দরী, লাল গোলাপ, খই বাবলা, কনকচাঁপা, গোলাপজাম, বাগান বিলাস, হেলিকুনিয়া, লালা পাতাবাহার, লাল জামরুল, চায়না বাঁশ, যজ্ঞ ডুমুর, আলমন্ডা, এলাচি ইত্যাদি।
(সংগ্রহিত)